উপস্থাপনাঃ কবির ভাষায়- "বিশ্বকবির সোনার বাংলা নজরুলের বাংলাদেশ জীবনানন্দের রূপসী বাংলা রূপের যে তার নেইকো শেষ।বাংলাদেশ বিশ্বের এক বিস্ময়। এ বিস্ময়ের প্রধান কারণ ষড়ঋতুর রঙ্গালয়। ষড়্বত নান রূপ, রস ও গন্ধে সাজায় এখানকার প্রকৃতিকে। তাই তাে কবির চোখে দেখা গােছে "আমাদের দেশখানি ছবির মতন।"
বাংলাদেশের ভুপ্রকৃতিঃ ভূপ্রকৃতির দিক থেকে বাংলাদেশ রূপ-বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ। এদেশের মাটিতে সােনাঝরা ফসল ফলে। কিছু কিছু অঞ্চল জুড়ে পার্বত্যভূমি থাকলেও দেশের অধিকাংশ অঞ্চল সমভূমি। সমতল ভূমির মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্রের মতো বিখ্যাত নদী। অসংখ্য নদীনালা দেশটিকে জালের মতেতা ঘিরে রেখেছে। এজন্য প্রকৃতি বিজ্ঞানীরা এদেশকে নদীমাতৃক দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
বাংলাদেশের জলবাুঃ বাংলাদেশের আবহাওয়া নাতিশীতােষ। প্রবল উষ্ণতা কিংবা শৈত্যের প্রভাব এখানে নেই। গ্রীম্মকালে উক্র-পশ্চিম কোণ থেকে কালবৈশাখী ঝড় প্রবাহিত হয়। এ সময় কিছুটা সূর্যতাপের প্রথরতা লক্ষ করা যায়। অনেক সময় প্রকৃত রুক্ষ ও শুক্ক আকার ধারণ করে। বর্ষাকালে প্রবল বারি বর্ষণের ফলে গরমের প্রকোপ কিছুটা কমে আসে। শরং ও হেমন্তের জলবায়ু শান্ত প্রকৃতির। শীতের জলবায়ু কিছু আর্দ্র। তার পরে আসে বসন্ত। এ সময় মনােমুন্ধকর দক্ষিণা হাওয়া এদেশের ওপর প্রবাহিত হয়।
বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্যঃ যড়ঋতুর অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত এ বঙ্গভূমি। পালা বদলের খেলায় বিচিত্র রূপের বাহার নিয়ে আসে ছয়টি ঋতু। এজন্য বলা হয়- Bangladesh is the favourite playground of nature, decorated with six seasons.
গ্রীস্ম ও বর্ষাঝতঃ গ্রীস্ম ও বর্ষাকাল বাংলাদেশের দুটি বিশেষ ঋতু। এ দুটি ঋতু দেশের নৈসর্গিক দূশ্যের অনেক পরিবর্তন ঘটায়। গ্রীম্মের প্রথর সূর্য কিরণে বংলার প্রকৃতি হয়ে ওঠে রুদ্রমৃর্তি। এ সময় হঠাৎ কালবৈশাখীর তাপব নৃত্যে মানুষের জীবন হয়ে ওঠে বিপর্যস্ত। তারপর আসে বর্ষা মুখকর। বর্ষার রিমঝিম বর্ষণে ধূলি-ধূসরিত মরুমাঠ পুলকিত শিহরণে জেগে ওঠ।
শরৎ ঋতুর পরিচয়ঃ কবির ভাষায়- বর্ষায় গ্রামবাংলার অপরূপ দূ্য নয়ন কমল দলে। ললিত রাগের সুর করে তাই শিউলি তলে। শাপলা, শালুক, পদ্ম, জুই, কেয়া আর কাশফুলের সৌরভে শরৎ রানি তার বীণার তারে সুর বাজিয়ে তােলে। সে সুরে মুখরিত হয় বাংলার আকাশ-বাতাস। তাই রূপের নতুন আবেশ চারদিকে শ্যামলিমায় সজ্জিত হয়ে আসে ভাদ্র ও আশ্বিন মাস । এ দু'মাসই শরৎকাল। বর্ষার গ্লানিটুকু মুছে দিয়ে প্রকৃতি নতুন রূপ ধারণ করে এ ঋতুতে।
হেমন্ত ঋতুর পরিচয়ঃ কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে হেমন্ত ঋতুর আগমন তাল, বাতাবি লেবু ও পেয়ারার মতো সুস্বাদু ফলসহ নবান্নের ডালি নিয়ে হেমন্ত বাংলার ঋতু বৈচিত্র্যে। মাঠঘাটে সােনার ফসল বাতাসে দোল খায় আর হেম অহংকারী আমেজ নবান্নের মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে দেয় সকলের নাকে।
প্রকৃতির রূপঃ শরৎ-হেমেন্তে আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভেসে যায়। স্নিগ্ধ রৌদ্রকরে মাটঘাট সবকিছু উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সর্বত্রই বিরাজ করে কাশফুলের নরম ছােঁয়া। আর মন্তে নতুন ধানের গন্ধে কিষানের মনের আনন্দ প্রকৃতিকে করে তােলে হাস্যোজ্জুল।
মানব মনে শরতের প্রভাবঃ কবির মতাে আমরা সাধারণ লােকেরাও শারদ প্রভাতের স্নিগ্নতায় মুদ্ধ হই। রাতভর ঘন বর্ষার অবসান ঘটিয়ে আকাশসহ চারদিক যেন আলােয় ভরপুর করে দেয় শরৎ রানি। আর হেমন্তের কথা মনে পড়লে লোভ জাগে পিঠা খাওয়ার।
শীতকালঃ পৌষ-মাঘের পরিসীমায় শুল্ক কাঠিন্য, পরিপূর্ণ রিক্ততা ও দিগন্তব্যাপী সুদূর বিষাদের প্রতিমূর্তিতে হেমন্তের পর আসে শীতের ধূসরতা। শীতের আগমনে প্রকৃতি হারাতে বসে তার সজীবতা। হিমেল হাওয়ায় ঝরে পড়ে গাছের পাতা শীতের রবিশস্য আনে প্রাচুর্য। পৌষের পিঠা আর মাঘের খেজুরের রস ঘরে ঘরে আনে উৎসবের সমারাহ।
বসন্তকালঃ ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বসন্ত ঋতু আসে ঋতুরাজের রূপ নিয়ে। দক্ষিণে মৃদুমন্দ বাতাসের যাদুস্পর্শে শীতের জরাগ্রস্ত পৃথিবীর সর্বাঙ্গে লাগে অপূর্ব শিহরণ। ঋতুচক্রের শেষ অবস্থানে আগমন বস্তের, কিন্তু তা সীমাহীন ঐশ্বর্যে মােহময়ীরূপে সবার দখিন দুয়ার খােলা, এসাে হে, এসাে হে, এসাে হে আমার বসন্ত এসাে, হয়ে ওঠে। মানুষ তখন তাকে সাদর সম্ভাষণে বলে আজ দখিন দুয়ার খোলা, এসো হে, এসো হে আমার বসন্ত।
উপসংহারঃ এই দেশ অপার সুন্দর নীলিমার দেশ। আর শ্যামলিমা নীলিমার মমতায় আমরা জড়িয়ে আছি প্রকৃতিকে আলিঙ্গন করে। আমরা মুপ্ধ হই তার অবাক করা রূপ সৌন্দর্য দেখে। বিশেষ করে শরৎ ও হেমন্ত ঋতু আমাদের হৃদয় মনকে নাড়া দেয় সবচেয়ে বেশি। এরূপ ঋতু বৈচিত্র্যের দেশে জন্মগ্রহণ করে আমরা গর্ববোধ করি। তাই স্বভাবতই কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে হয় এমন দেশটি কোথাও খুজেঁ পাবে নাকো তুমি। সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।