"ইসলামে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ" বিভাগে করেছেন (1,222 পয়েন্ট)
ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিবেশীর অধিকার ও কর্তব্যসমূহ বর্ণনা কর?

1 টি উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন (1,538 পয়েন্ট)
সম্পাদিত করেছেন

ভূমিকাঃ ইসলামি সমাজব্যবস্থা সমাজে বসবাসকরী মানুষের প্রতি দায়িত্বশীল। এ সমাজের প্রত্যেক মানুষই কারাে না কারো প্রতিবেশী। সামাজিক জীবনকে সুন্দর, সুশৃঙ্খল, শান্তিপূর্ণ ও মধুময় করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে প্রতিবেশী । প্রদত্ত প্রশ্নের আলোকে প্রতিবাশীর প্রতি নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আলােচনা করা হলোঃ


প্রতিবেশীর প্রতি নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য: ইসলাম প্রতিবেশীর পারস্পরিক দায়িত্ব কর্তব্য আদায়ের মাধ্যমে সমাজকে শান্তি পূর্ণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। নিম্নে প্রতিবেশীর কয়েকটি দায়িত্ব কর্তব্য উল্লেখ করা হলােঃ-


১. অধিকার আদায় করা: সমাজে বসবাসকারী প্রতিবেশীরাই পরস্পরের সবচেয়ে কাছের মানুষ। তারা সুখ-দুঃখ, হাসি-আনন্দ পরস্পরের অংশীদার হয়ে থাকে। তাই মহান আল্লাহ প্রতিবেশীর পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য ও অধিকার নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এসব অধিকার আদায় মুসলমানদের অবধারিত কর্তব্য। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, "জিব্রাঈল (আ) প্রতিবেশীর অধিকার আদায়ের ব্যাপারে আমাকে এত বেশি তাগিদ দিয়েছে যে, মনে হয়েছে প্রতিবেশীকে আমার উত্তরাধিকার বানিয়ে দেয়া হবে।" (বুখারী ও মুসলিম)।


২. সদাচারণ করা: প্রতিবেশীর সাথে ভালাে আচরণ না করলে তার থেকে ভালাে আচরণ পাওয়া যায় না । তাই প্রতিবেশীর সথে ভালো আচরণ করতে হবে। এটা প্রতিবেশীর আধিকার। প্রতিবেশীর সাথে সদাচারের নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন- অর্থাৎ "তােমারা পিতামাতার সাথে ইহসান করবে আত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকিন, আত্মীয় প্রতিবেশী, এবং সঙ্গী-সাথীদের সাথেও ইহসান করবে।" (সূরা নিসা : ৩৬)।


৩. জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: প্রতিবেশীর জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অপর প্রতিবেশীর দায়িত্ব এবং কর্তব্য।প্রতিবেশীর সাথে এমন আচরণ করা উচিত নয় যে, তার জীবন ঝুঁকির মধ্যে পতিত হয়। ইসলাম প্রতিবেশীর জীবনের নিরাপত্ত
দেয়াকে অবশ্যক কর্তব্য করে দিয়েছে। মহানবি (সা.) বলেছেন "আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়। আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়। আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়।" সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, "কে মুমিন নয়। হে আল্লাহর রাসূল।" জবাবে তিনি বললেন, "যার প্রতিবেশী তার ক্ষতি থেকে নিরাপদ নয়।" (বুখারী ও মুসলিম)।

৪. সম্পদের নিরাপত্তা প্রদান করা: প্রতিবেশীর সম্পদের নিরাপত্তা প্রদান করা অপর প্রতিবেশীর অবশ্য কর্তব্য। প্রতিবেশী অপর প্রতিবেশীর সম্পদ নষ্ট করবে না এবং তা জোর করে আত্মসাৎ করবে না, বরং ক্ষতির হাত থকে প্রতিবেশীর সম্পদকে রক্ষা করবে। মহানবি (সা.) বলেছেন "যে ব্যক্তি কারো এক বিঘত জমি জার করে দখল করবে, কিয়ামতের দিন তার গলায় সাত স্তের জমি ঝুলিয়ে দেয়া হবে।" (বুখারী ও মুসলিম)।

৫. সাহায্য-সহযােগিতা করা: প্রতিবেশী দরিদ্র হলে তাকে সাহায্য-সহযােগিতা করা, বিপদে-আপদে তার পাশে দাঁড়ানাে অপর প্রতিবেশীর অবধারিত কর্তব্য। প্রতিবেশীর প্রয়োজন পূরণ করা প্রতিবেশীর দায়িত্ব । রাসূলল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়াজন পূরণ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার অভাব পূরণ করবে। আর যে ব্যক্তি কোনাে মুসলিমের দুঃখ কষ্ট দূর করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তার দুঃখ কষ্টসমূহের মধ্য থেকে একটি বড় দুঃখ কষ্ট দূর করে দেবেন।" (বুখারী ও মুসলিম)।

৬. মান-সম্মানের নিরাপত্তা দেয়া: প্রতিবেশীকে হেয় প্রতিপন্ন না করা, তাকে ঘৃণা না করা, তাকে লজ্জা না দেয়া, তার গীবন না করা, তার বিরুদ্ধে কৎসা রটনা না করা, তার মান-সম্মান রক্ষা করা প্রত্যক মুসলমানের কর্তব । প্রতিবেশ ঈজ্জত আবরুর রক্ষার জন্য প্রতােক মসলিমকে জিম্মাদারী হতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- "ঐ ব্যক্তি মুমিন নয় যার হাত ও জিহ্বার অনিষ্টতা থেকে অন্যসব মুসলিম নিরাপদ নয়।" (মুসলিম)।

৭. কলহ-বিবাদ না করা: প্রতিবেশীর প্রতি কঠিন ভাষা ব্যবহার না করা, বকা-ঝকা না করা, দ্বন্দ্ব-কলহ না করা, ঝগড়া-বিবাদ না করা, প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন-- "কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম ঝগড়াটে দুই প্রতিবেশী মকদ্দমা পেশ করা হবে ।" (মসনাদে আহমদ)।

৮. দোষক্রটি গােপন রাখা: প্রতিবেশীর মধ্যে কোনাে দোষক্রটি বা বদ অভ্যাস থাকলে তা গােপন রাখা অন্য প্রতিবেশীর কর্তব্য।রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষক্রুটি গোপন রাখবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তার দোষক্রুটি গোপন রাখবেন।

৯. খাদ্য দান করা: যদি প্রতিবেশী অভাবে থাকে, খাদ্য-পানীয় না থাকে তবে তাদেরকে খাদ্য-দান করা অন্য প্রতিবেশীর কর্তব্য। মহানবি (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি নিজে পেটপুরে খায় অথচ তার প্রতিবেশী অভুক্ত থাকে, সে মুমিন নয়।" 

১০. কষ্ট দূর করা: প্রতিবেশী বিপদাপদ বা কষ্টে থাকলে, তা দূর করা অন্য প্রতিবেশীর কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি কোনাে মুসলিমের দুঃখ কষ্ট দূর করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তার দুঃখ কষ্টসমূহের মধ্য হতে একটি বড় কষ্ট দূর করে দিবেন।" (বুখারী ও মুসলিম)।

১১. ধার দেয়া: মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়ােজনীয় ছােটখাটো জিনিসপত্র টাকা পয়সা ইত্যাদি ধার দেয়া প্রতিবেশীর কর্তব্য। মহান আল্লাহ বলেন- অর্থাৎ (দুর্ভাগ সেসব নামাযীর) "যারা নিত্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদি ধার দিতে অস্বীকার করে।" (সূরা মাউন : ৭)

১২. উপহার দেয়া: পারস্পরিক সম্পর্ক সুন্দর ও মধুময় করতে মাঝে মাঝে প্রতিবেশীকে উপহার দেয়া প্রত্যক মুসলমানের কর্তব্য। মহানবি (সা.) বলেছেন, উপহার দাও। তাহলে তােমাদের পরস্পরে ভালােবাসা বৃদ্ধি পাবে।"

১৩. কল্যাণ কামনা করা: উপস্থিত-অনুপস্থিত সকল মুসলমানের কল্যাণ কামনা করা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য। তাই প্রতিবেশীর কল্যাণ কামনা করতে হবে। মহানবি (সা.) বলেছেন "এক মুমিন অপর মুমিনের ভাই। সে তাকে ধ্বংসাত্মক বিষয় থেকে রক্ষা করে এবং তার অনুপস্থিতিতে তার স্বার্থ রক্ষাকরে।" (তিরমিযী)।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, মানুষ পরস্পরের মুখাপেক্ষী। অন্যের সাহায্য ছাড়া সে চলতে পারে না। তাই সামাজিক জীব হিসেবে প্রতিবেশীকে সাহায্য করা ইমানের দাবি। অতএব, প্রতিবেশীর প্রতি যে সব কর্তব্য ইসলাম আরােপ করেছে, তা আদায় করা প্রত্যেক মুমিনের অবধারিত কর্তব্য। 

সম্পর্কিত প্রশ্নসমূহ

1 টি উত্তর
27 ডিসেম্বর 2023 "ইসলামে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Admin (1,222 পয়েন্ট)
1 টি উত্তর
27 ফেব্রুয়ারি "ইসলামে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Admin (1,222 পয়েন্ট)
1 টি উত্তর

আপনাকে priyobe এ স্বাগতম, এখানে আপনি প্রশ্ন করতে পারবেন এবং যে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন। আপনি যদি একজন ইসলামি সহ সকল জ্ঞান অন্বেষি হন তাহলে আমাদের প্লাটফর্ম আপনার জন্য। এখান থেকে যেমন আপনি জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন তেমনিই এটি ব্যবহার করে আপনার জ্ঞান দিয়ে অপরকে সহায়তা করতে পারবেন। জ্ঞানার্জনের অন্যতম বাংলা প্লাটফর্ম হলো priyobe, আমাদের সাথে থাকুন জ্ঞানঅর্জন করুন।

4 Online Users
0 Member 4 Guest
Today Visits : 3339
Yesterday Visits : 6986
Total Visits : 211378

1,731 টি প্রশ্ন

1,321 টি উত্তর

13 টি মন্তব্য

12 জন সদস্য

...