ইসলামের আভিধানিক অর্থঃ ইসলাম শব্দের অর্থ হলো-
১। আনুগত্য করা,
২। মেনে চলা,
৩। বশ্যতা স্বীকার করা,
৪। অবনত হওয়া,
৫। কোনো কাজে ন্যস্ত করা,
৬। সন্ধিতে উপনীত হওয়া,
৭। ইসলাম ধর্ম কবুল করা,
৮। নিরাপত্তা লাভ করা,
৯। নিষ্ঠার সাথে কাজ করা,
১০। আত্নসমর্পণ করা ইত্যাদি।
পারিভাষিক সংজ্ঞাঃ
১। হাদিসে জিবরাঈলে মহানবী (সা.) বলে-
ইসলাম হলো, তুমি সাক্ষ্য দিবে আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নাই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল। সালাত প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত প্রদান করবে, রমজানের রোজা রাখবে এবং বায়তুল্লাহর হজ করবে যদি করার সামর্থ্য থাকে।
২। ইমাম আবু হানীফা (রহ.) বলেন-
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) এর নির্দেশনাসমূহ মেনে নেয়া, সেগুলোর অনুকরণ করা এবং তাঁদের নিষিদ্ধ বিষয়সমূহের পরিহার করার নামই ইসলাম।
৩। আল্লামা ইকবাল বলেন, ধর্মীয় বিশ্বাসসহ বাস্তব জীবনের সমন্বয়ে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত একটি নিদিষ্ট জীবনব্যবস্থার নাম ইসলাম।
ইমান এর আভিধানিক অর্থঃ ইমান এর আভিধানিক অর্থ হলোঃ-
১। আনুগত্য করা,
২। স্বীকৃতি দেয়া,
৩। নিরাপত্তা প্রদান করা,
৪। নির্ভর করা,
৫। অবনম হওয়া ইত্যাদি।
পারিভাষিক সংজ্ঞাঃ
ইমাম গাযালি (রহ.) বলেন-
১। "নবি করীম (সা.) যেসব বিষয় নিয়ে এসেছেন, ঐসব কিছুর সত্যতা স্বীকার করা আর তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করাকে ইমান বলে।"
২। কারো কারো মতে- 'বিশ্বাস হলো রসূর (সা.) হতে যা এসেছে তা সংক্ষিপ্ত কিংবা বিস্তারিতভাবে স্বীকার করা।
৩। আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্নিরী (রহ) এর মতে - 'নবি করিম (সা.) এর উপর ভরসা করে তিনি যা কিছু এনেছেন তাতে বিশ্বাস করা হলো ইমান।
ইমান ও ইসলামের মধ্যে সম্পর্ক: পবিত্র কুরআন ও হাদিসের ভাষ্যানুযায়ী দেখা যায়, ইমান ও ইসলাম উভয় শব্দ এক ও অভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আবার কখনাে ভিন্নার্থে এবং কখনাে উভয়কে সম্পূরক অর্থেও ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।
১. এক ও অভিন্ন অর্থবহ: সাধারণত ইমান ও ইসলাম একই অর্থ বহন করে। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন- "যদি তােমরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাক, তা হলে তাঁর ওপরই ভরসা কর, যদি তােমরা আত্মসমর্পণকারী বা অনুগত হয়ে থাক।" (সূরা ইউনুস : ৮৪) এখানে ইমান ও ইসলামকে একই অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। মুসলিম ও মুমিন যেমন একে অন্যের সাথে গভীর সম্পর্কে আবদ্ধ, ইমান ও ইসলাম শব্দ দুটোও তেমন পারস্পরিক ভাব বিনিময়ে সুপরিস্ফুট । কাজেই এটা বলার যেমন অবকাশ নেই যে, অমুক ব্যক্তি মুসলিম কিন্ত মুমিন নয়। অর্থাৎ ইমান ও ইসলাম মূলত একই বিষয়। মুসলিম ধর্মতত্ত্ববিদ ও দার্শনিকদের অধিকাংশের মতই এটা যে, ইমান ও ইসলাম এক ও অভিন্ন জিনিস। উভয়ের মাঝে তেমন কোনাে পার্থক্য নেই।
২. ইসলামের সর্বেচ্চ সােপান ইমান: ইমানের আভিধানিক অর্থ বিশ্বাস ও প্রত্যয়।পারিভাষিক দৃষ্টিতে ইসলামের মূল বিষয়গুলােকে অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা এবং সে অনুসারে আমল করাকে ইমান বলে। তাই ইমান ইসলামের সর্বোচ্চ সােপান।
৩. অবিচ্ছেদ্য ও ঘনিষ্ঠ: ইমানের সাথে ইসলামের ঘনিষ্ঠ ও অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিদ্যমান। ইসলাম ইমানেরই বহিঃপ্রকাশ। ইমান ছাড়া ইসলাম কল্পনা করা যায় না; আবার ইসলাম ব্যতীত ইমানের অস্তিত্ব বাঝা যায় না।
৪. শিকড় ও কাণ্ডের সম্পর্ক: শিকড়ের সাথে গাছের কাণ্ড, শাখা-প্রশাখা এবং পত্র-পল্লব ও ফুল-ফলের যে সম্পর্ক, ইমানের সাথে ইসলামেরও সেরূপ সম্পর্ক।
৫. ইমান অন্তর্নিহিত চেতনা আর ইসলাম তার রূপায়ণ: গাছের শিকড় মাটির ভেতর থেকে খাদ্যরস যােগায়, তাতেই গাছের কাণ্ড, শাখা- প্রশাখা, পত্র-পল্লব ও ফুল-ফল সজীব ও সতেজ হয়; তেমনি ইমানও মানুষের অন্তরের অন্তস্থলে আল্লাহর প্রতি অনুরাগ এবং তাঁর সন্তুষ্ট ও ভালোবাসা লাভের বাসনা, সৃষ্টি করে, তাতেই ইসলাম সজীবও সতেজ হয়ে পরিপূর্ণ সৌন্দর্যে বিকশিত হয়।
৬. ভিত্তি ও ইমারত সদৃশ: ইমান হচ্ছে ইসলামি জীবন ব্যবস্থার ভিত্তিপ্রস্তর। এর ওপরই ইসলামি ব্যবস্থার গােটা ইমারত গড়ে এবং তাঁর সন্তষ্টি ও ভালােবাসা লাভের বাসনা সৃষ্টি করে, তাতেই ইসলাম সজীব ও সতেজ হয়ে পরিপূর্ণ সৌন্দর্য বিকশিত হয়।