উত্তর|| ভূমিকাঃ ইবনে তােফায়েল স্পেনের একজন বিশিষ্ট মুসলিম দার্শনিক। তিনি ছিলেন একাধারে দার্শনিক, চিকিৎসাবিদ, গাণিতিক, কবি ও বিজ্ঞানী। দর্শন ক্ষেত্রে তার মতবাদ ইবনে বাজার মতবাদের অনুরূপ। বহুধা জ্ঞানের অধিকারী ইবনে তােফায়েল দর্শন, বিজ্ঞান, গণিত ও চিকিৎসা শাস্ত্রের উপর বেশকিছু মূল্যবান প্রবন্ধ ও গ্রন্থ রচনা করেন। তার গ্রন্থাবলির মধ্যে "হাই ইবনে ইয়াকযান" বিখ্যাত।
মুসলিম দর্শনে ইবনে তােফায়েলের অবদানঃ মুসলিম দর্শনে ইবনে তােফায়েলের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। তিনি দর্শনের উপর বেশ কিছু মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি বিখ্যাত দার্শনিক উপন্যাস "হাই ইবনে ইয়াকজান গ্রন্থের জন্য বিশ্বের দার্শনিক সম্প্রদায় ও সুধী মহলে বিশেষভাবে প্রশংসিত হন এবং খ্যাতি লাভ করেন। তার এ গ্রন্থটি ছিল মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। এটি তার বিষয়বস্তুর মৌলিকত্ব ও রচনাশৈলীর জন্য এত প্রসিদ্ধি লাভ করে যে, এটা হিব্রু, ল্যাটিন ডাচ, রুপশ, স্পেনিস, ফ্রান্স ইত্যাদি বহু ভাষায় অনুদিত হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের জ্ঞানপিপাসু মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
ইবনে তােফায়েল ইবনে বাজার দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। ইবনে তােফায়েলের মতে, পরমসত্তাকে জানার একমাত্র পথ হচ্ছে স্বজ্ঞা বা অতীন্দ্রিয় অনুভূতি। তবে ইবনে তােফায়েল বর্ণিত অতীন্দ্রিয় অনুভূতির সাথে সুফিদের অতীন্দ্রিয় অনুভূতির মধ্যে কিছুটা পার্থক্য বিরাজমান। কারণ ইবনে তােফায়েলের অতীন্দ্রিয় অনুভূতি সুফিদের মতাে ধ্যান তন্ময়তার মাধ্যমে প্রাপ্ত অনুভূতি নয়। তাঁর মতে, এ অনুভূতি বিশুদ্ধ বুদ্ধির অনুশীলনের মাধ্যমে প্রাপ্ত ব্যাপক অনুভূতি। মানুষ বুদ্ধিবৃত্তির স্বাধীন অনুশীলনের মাধ্যমে কার্যকারণ শূঙ্খলের মধ্য দিয়ে পরম স্রষ্টার ধারণা লাভ করতে পারে।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, ইবনে তােফায়েলের দার্শনিক মতবাদ ছিল অত্যন্ত বাস্তবিক। ইবনে তােফায়েল বিশ্বাস করতেন যে, প্রচলিত ধর্মীয় অনুশাসন বা আচার অনুষ্ঠান ইত্যাদি স্বল্প বুদ্ধিসম্পন্ন সাধারণ মানুষের জন্য প্রযোজ্য। কেননা এ সকল লােক অমূর্ত সত্য উপলব্ধি করতে সমর্থ নয়।