নিম্নে হযরত শাহ মখদুম (রহ.) এর কারামতসমূহ সম্পর্কে আলােচনা করা হলােঃ
প্রথম কারামতঃ শাহ মখদুম (রহ.) চারজন দরবেশ সঙ্গীসহ নদীবক্ষে কুমিরের পীঠে চড়ে রাজশাহীর রামপুরের বােয়ালিয়ার পথে যাত্রা করেন। এখানে এসে পদ্মানদীর তীরে সঙ্গীবর্গসহ যাত্রা বিরতি করেন। তারা সকলেই রাজশাহী অঞ্চলে ইসলামের দাওয়াত দেন । সকলে শাহ মাখদুমের সকল কর্মকাণ্ডের সহযােগী ছিলেন।
দ্বিতীয় কারামতঃ দেও রাজ্যের বিধিমতে তখন রাজ্যে নরবলির বিধান ছিল। তার নির্দেশে নরবলি দেওয়া হতো । তখন বােয়ালিয়ার এক নাপিতের তিন পুত্র । ইতঃপূর্বে রাজার নির্দেশে তার দুই পুত্রকে বলি দেওয়া হয়। এবার তার তৃতীয় পুত্রকেও বলি দেওয়ার জন্য রাজা ফরমান জারি করেন। নাপিত নিরুপায় হয়ে শাহ মখদুমের শরণাপন্ন হয়। তিনি তাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে পদ্মানদীর তীরে সপরিবারে দেখা করতে বলেন। দেখা করার পর তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ভয় নেই, তােমার পুত্রকে রাজা বলি দিতে পারবে না; বরং সেই কিছুদিনের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে। বলি দেওয়ার নির্দিষ্ট দিনে রাজার বাহিনী এসে নাপিত পুত্রকে ধরে নিয়ে গেল। অসংখ্য খড়গের আঘাতে নাপিত পুত্রকে বলি দেওয়া সম্ভব হলাে না। অবশেষে বিরক্ত হয়ে রাজা বলল, একে ছেড়ে দাও। এর দোষ আছে, তাই বলি হচ্ছে না।" তারপর তাকে ছেড়ে দেওয়া হলাে এবং নাপিত পুত্র প্রাণে বেঁচে গেল।
তৃতীয় কারামতঃ হযরত শাহ মখদুম (রহ.) এর দুইটি বাঘ ছিল। এরা দেখতে ঘােড়ার মতাে। এগুলাের মাথা পর্যন্ত কেশরাজি বাতির আলােতে সােনার মতাে ঝলমল করতা। বাঘ দুটি সােমবার ও শুক্রবার রাতে আসত। এরা মাজারের চারদিকে প্রদক্ষিণ করতাে। তাদের লেজ দ্বারা মাজার ঝাড় দিত। মাজারে কারাে ক্ষতি করতাে না। এভাবে কিছুক্ষণ থেকে চলে যেত।
চতুর্থ কারামতঃ একবার হযরত শাহ মখদুম (রহ.) এর মৃত্যুর কয়েক বছর পর দেও রাজের অনুসারীরা চিন্তা করল মাজার থেকে শাহ মাখদুমের লাশ গুম করে অন্যত্র সরিয়ে নিলে তাদের রাজার আবার আবির্ভাব ঘটবে, আবার নৃতৃত্ব দিতে পারবে, এ নেতৃত্ব্ স্থায়ী হয়ে যাবে। একদিন রাতে তারা মাজারে লাশ গুমের জন্য উপস্থিত হলাে। সেখানে এসে দেখে স্বয়ং দেও রাজ ও তার নিকটতমরা শাহ মখদুম (রহ.) এর কবর যিয়ারতে মগ্ন এবং বনের হিংস প্রাণীরা মাজারের চারপাশে ঘেরাও করে রেখেছে।
শেষ কথাঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বস্তুত হযরত শাহ মখদুম (রহ.) আল্লাহর ওলি ছিলেন। ওলিদের থেকে প্রকাশিত অলৌকিক বিষয়াবলি সত্য। এগুলোকে বিশ্বাস করা ইমানদারের কর্তব্য। তার বহু কারামত রয়েছে। তিনি ছদ্মবেশ ধারণ করে থাকতেন। ফলে সাধারণ মানুষের কাছে প্রায়ই তিনি ছিলেন পরম আকাঙ্খিত ও পরম আরাধ্য ধন।