উত্তর|| ভূমিকাঃ ইবনে তাফায়েল স্পেনের একজন বিশিষ্ট মুসলিম দার্শনিক। তিনি ছিলেন একাধারে চিকিৎসাবিদ, গাণিতিক, কবি এবং বিজ্ঞানী। তিনি গ্রানাডায় চিকিৎসা পেশায় নিয়াজিত ছিলেন। দর্শন এর ক্ষেত্রে তার মতবাদ ইবনে বাজার মতবাদের অনুরূপ । তার গ্রন্থাবলির মধ্যে দার্শনিক উপাখ্যান হাই ইবনে ইয়াকযান প্রসিদ্ধ।
(ক) পরমসত্তা সম্পর্কে মতামতঃ ইবনে তােফায়েলের মতে, পরমসত্তাকে জানার একমাত্র পথ হচ্ছে স্বজ্ঞা বা অতীন্দ্রিয় অনুভূতি তবে ইবনে তােফায়েলের বর্ণিত অতীন্দ্রিয় অনুভূতির সাথে সুফিদের অতীন্দ্রিয় অনুভূতির মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। কারণ ইবনে তােফায়েলের অতীন্দ্রিয় অনুভূতি সুফিদের মতা ধ্যান তন্ময়তার মাধ্যমে প্রাপ্ত অনুভূতি নয়। তার মতে, এ অনুভূতি বিশুদ্ধ বুদ্ধির অনুশীলনের মাধ্যমে প্রাপ্ত ব্যাপক অনুভূতি। মানুষ কুদ্ধিবৃত্তির স্বাধীমন অনুশীলনের মাধ্যমে কার্যকারণ শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে প্রাপ্ত এ অনুভূতির সাহায্যে পরম স্রষ্টার ধারণা লাভ করতে পারে।
(খ) আত্ম সম্পর্কে মতামতঃ তিনি পরমসত্তাকে আলােচনা করার পর আত্মা সম্পর্কে আলােচনা করেন। তার মতে, আল্লাহর গুণাবলি ও জ্ঞান সম্পর্কে অভিহিত হওয়ার মাধ্যমেই হলাে আত্মিক শক্তি। এই স্তরে এটা উপলদ্ধি করা যায় যে, পশু রাজ্য থেকে উন্নততর এক রাজ্যের অনুভুক্ত এবং স্বর্গীয় মন্ডলকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো শক্তিসম্পন্ন । তাই এই বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে, আত্মা হলাে স্বর্গীয় মন্ডলের অন্তর্ভুক্ত সর্বোচ্চ গুণ, আর দেহ হলাে শুধু এই জগতের অন্তর্ভুক্ত। আর পরমসত্তাকে উপলদ্ধি করার বা জানার অন্যতম মাধ্যম হলাে আত্মিক শক্তি।
শেষ কথাঃ পরিশেষে বলা যায় যে, ইবনে তোফায়েলের মতে, পরমসত্তা হলো যাকে স্বজ্ঞ বা অতীন্দ্রিয অনুভূতির সাহায্যে জানা যায়। মানুষ বুদ্ধিব্যক্তির স্বাধীন অনুশীলনের মাধ্যমে কার্যকারণ শৃঙ্খলের মধ্যদিয়ে প্রাপ্ত এ অনুভূতির সাহায্যে পরম স্রষ্ট্রার ধারণা লাভ করতে পারে। আর ব্যক্তির আত্মা দেহের মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকেন।