ভূমিকাঃ ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা থেকে দেখা যায় যে, মুসলমান ও কাফিরদের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধগুলো ছিল অসমযুদ্ধ। এ সকল যুদ্ধে অস্ত্র ও সেন্যের দিক দিয়ে কাফিরদের শক্তি ছিল মুসলমানদের চেয়ে বেশি। শক্তির দিক থেকে অসম হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানগণ মহান আল্লাহর সাহায্যে বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বদর যুদ্ধ ছিল তন্মধ্যে অন্যতম। এযুদ্ধে মহান আল্লাহ মুমিনদেরকে ধারাবাহিকভাবে সাহায্য করেছেন।
বদর যুদ্ধে মুসালিমদের প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত সাহায্যঃ মহান আল্লাহ বদর যুদ্ধে মুসলমানদের প্রতি যে সকল মদদ বা সাহায্য নাজিল করেছেন, তা নিচে ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হলোঃ
-
১. হিদায়েত দানঃ বদর যুদ্ধ মুসলমানদের প্রতি মহান আল্লাহর প্রথম নিয়ামত হলো হিদায়েত দান। তিনি মুমিনদেরকে মদিনা থেকে বের হতে বাধ্য করেন এবং পরিণামে তাদেরকে হিদায়েত দানের মাধ্যমে সাহায্য করেন। এ জন্য মহান আল্লাহ বলেন- আপনার প্রতিপালক আপনাকে ঘড় থেকে বের করেছেন যথাযতভাবে। (সূরা আনফালঃ ৫)
-
২. সাহায্যের প্রতিশ্রুতি প্রদানঃ বদর যুদ্ধে মুমিনদের প্রতি মহান আল্লাহর দ্বিতীয় নিয়ামত ছিল, তাদেরকে যেকোনো একটি দলের প্রতি বিজয়ের প্রতিশ্রুতি। এটাও মহান আল্লাহর দান। আল্লাহ তায়ালা বলেন - আর স্মরণ কর! যখন আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিলেন, দুটি দলের একটি তোমাদের করতলগত হবে। (সূরা আনফাল ৭)
-
৩. ফেরেশতা অবতরণঃ বদর যুদ্ধে মুমিনদের প্রতি মহান আল্লাহর তৃতীয় নিয়ামত ছিল আকাশ হতে ফেরেশতা নাজিলের মাধ্যমে মুমিনদের সাহায্য করা। যেমন আল্লাহ তায়ালা সূরা আনফালে বলেন - আমি তোমাদের এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করব, যারা ধারাবাহিকভাবে আসবে।
-
৪. আত্মিক প্রশান্তি দানঃ বদর যুদ্ধে মুমিনদের প্রতি চতুর্থ নিয়ামত ছিল আত্মিক প্রশান্তি দান। মানসিক প্রশান্তি দানের জন্যই আল্লাহ মুমিনদেরকে ফেরেশতার মাধ্যমে সাহায্যের প্রতিশ্রতি দিয়েছিলেন। মহান আল্লাহ বলেন-অর্থাৎ, এবং তােমাদের অন্তরে প্রশান্তি দানের জন্য সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। (সূরা আনফাল: ১০)
-
৫. তন্দ্রাচ্ছন্নতাঃ বদর যুদ্ধে মুমিনদের প্রতি মহান আল্লাহর পঞ্চম মদদ ছিল তন্দ্রাচ্ছন্নতা। মানসিক প্রশান্তির জন্য তিনি তাদেরকে এ শান্তি দান করেন।
-
৬. বারি বর্ষণঃ বদর যুদ্ধে মুমিনদের প্রতি মহান আল্লাহর ৬ নাম্বার নিয়ামত ছিল আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করা। আর এর দ্বারা মুমিনরা পিপাসা নিবারণ করেন। অপবিত্রতা দূর করেন এবং তাদের অবস্থানের মাঠকে চলাচলের উপযোগী করে দেন। মহান আল্লাহ বলেন- আকাশ হতে তোমাদের প্রতি ভারি বর্ষণ করে এর দ্বারা তােমাদের পবিত্র করেন।
-
৭. শয়তানের কুমন্ত্রণা দূরকরণঃ বদর যুদ্ধে শয়তান মুমিনদের অন্তরে কুমন্ত্রণাদেয় যে তােমরা নিজেদেরকে মুমিন দাবী করছ, অথচ রাসূল তােমাদের মাঝে অবস্থান করা সত্ত্বেও তােমাদের চেয় কাফিররা সবদিক থেকে ভালাে অবস্থানে রয়েছে। তারা পানিও দখল করে রেখেছে, তােমাদের থেকে উচু স্থানে অবস্থান করছে, পানির অভাবে তােমরা অযু-গােসল ছাড়াই নামায আদায় করছ ইত্যাদি ভাবে শয়তান মুমিনদের কুমন্ত্রণা দিচ্ছিল। মহান আল্লাহ মুমিনদের মন থেকে এসব কুমন্ত্রণা দূর করে দেন। যেমন মহান আল্লাহ সূরা আনফালে বলেন এবং তিনি তোমাদের থেকে শয়তানের কুমন্ত্রণা দূরীভূত করে দেন।
-
৮. হৃদয় সুদৃঢ়করণঃ বদর যুদ্ধে মুমিনদের প্রতি মহান আল্লাহর অষ্টম নিয়ামত ছিল হৃদয় সুদূঢ় করণ । তন্দ্রা ও বৃষ্টির মাধ্যমে তিনি মুমিনদের হৃদয়কে সুদৃধ করেন। আল্লাহ বলেন - আর তােমাদের হৃদয়কে সুদৃঢ় করবেন। (সূরা আনফাল : ১১)
-
৯. পা-সুদূঢ়করণঃ যুদ্ধ ময়দানে মুমিনদের অবস্থান ছিল বালুকাময় প্রান্তর ফলে তাদের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছিল। তখন বৃষ্টি বর্ষণ করে আল্লাহ যমীনকে শক্ত করে দেন। এতে তাদের চলাচলে সুবিধা হয় এবং পা স্থির হয়। মহান আল্লাহ বলেন- এবং এর দ্বারা পা সমূহ স্থির রাখবেন। (সূরা আনফাল : ১১)
-
১০. মুমিনদের অবিচল রাখাঃ বদর যুদ্ধে মহান আল্লাহ মুমিনদেরকে কয়েকটি গোপন নিয়ামত দান করেছিলেন, যার প্রথমটি ছিল ফেরেশতার মাধ্যমে মুমিনদেরকে যুদ্ধের প্রতি অবিচল রাখা। তাই ফেরেশতারা সাহস দানের মাধ্যম মুমিনদেরকে অবিচল রাখেন। আল্লাহ বলেন অর্থাৎ, অতএব তােমরা মুমিনদেরকে অবিচল রাখাে।" (সূরা আনফাল : ১২)
-
১১. কাফিরদের অন্তরে ভীতি সৃষ্টিঃ আল্লাহ তায়ালা কাফিরদের অন্তরে ভীতি সুষ্টি করে দেন। এভাবে তিনি মুমিনদেরকে সাহায্য করেন। আল্লাহ বলেন- আমি কাফিরদের অন্তরে ভীতি সৃষ্টি করে দেব।" (সূরা আনফাল : ১২)
-
১২. ফেরেশতার দ্বারা আঘাতঃ মহান আল্লাহ ফেরেশতার মাধ্যমে কাফিরদেরকে আঘাত করার দ্বারা তাদেরকে ধরাশায়ী করে দেন এবং মুমিনদের সাহায্য করেন। মহান আল্লাহ বলেন- অতএব, তােমরা তাদের স্কন্ধে আঘাত হানাে, আর আঘাত কর তাদের প্রতিটি জোড়ায়, জোড়ায়।" (সূরা আনফাল : ১২)
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বদর যুদ্ধে মহান আল্লাহ তায়ালা উল্লিখিত সাহায্য ও নিয়ামত দ্বারা মুমিনদের সাহায্য করেছেন। মহান আল্লাহর সাহায্যেই মুমিনরা কাফিরদেরকে হত্যা করে এবং যুদ্ধে বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হয়।